বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিল এর সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে, ঐ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক কোটা বিরোধী আন্দোলন করে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাকোটা সহ সকল কোটা সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করে।
কোটা সুবিধা বাতিলের আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন থাকতো।
কিন্তু, এই রায়ের ফলে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাই ফিরবে নাকি বাকি সব কোটাই বহাল হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠ প্রকাশ হলে হাইকোর্টের আদেশের বিস্তারিত জানা যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা সংস্কার ছিল মূল দাবি
কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও মূলত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরালো হতে শুরু করে পবর্তীতে যা এপ্রিলে এসে তীব্র হয়ে ওঠেছিল ।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে ১৭১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
আন্দোলনের মুখেই ওই বছরের ১১ই এপ্রিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তখন অবশ্য কোটার হার কমানো বা সংস্কারের দাবি ছিল আন্দোলনকারীদের।
‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’এর ব্যানারে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলে সেগুলোর অন্যতম ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার।
আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন, ৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি নাতনি দের জন্য বরাদ্দ সেটিকে ১০ এ নামিয়ে আনা হোক।
বাতিলের পর কোটা বহালের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের স্বজনদের কয়েকটি সংগঠন আন্দোলনে নামে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা ।
ছয় বছর পর আদালতের রায়ে আবার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার চালু হল ।